দশমিনা (পটুয়াখালী) থেকে সঞ্জয় ব্যানার্জী
মৎস্য আড়ৎ ও হাটবাজারগুলোতে অভিযান জোরদার করার কথা থাকলেও এসবকে তোয়াক্কা করছেন না মৎস্য আড়তদাররা। তারা মৎস্য অধিদফতর ও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জাটকা আহরণ সরবরাহ চালিয়ে আসছে। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার জাটকা ইলিশ বেচাকেনা হচ্ছে প্রকাশ্যেই। পিকমাপ, ট্রাকযোগসহ বিভিন্ন মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা হলেও জাটকা নিধন বন্ধে মৎস্য অধিদফতর এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর ভূমিকা নেই। মাঝে মধ্যে দুয়েকটি অভিযান চালালেও তা পর্যাপ্ত নয়।
তবে অভিযোগ রয়েছে, মৎস্য আড়তগুলোতে প্রকাশ্যে টনে টনে জাটকা বেচাকেনা হলেও সেখানে অভিযান না চালিয়ে রহস্যজনক কারণে পরিবহনগুলোতে অভিযান চালানো হয়। এ অভিযানে পরিবহনে থাকা যাত্রীদের ভোগান্তিতে পরতে হয়।
বাঁশবাড়িয়া লঞ্চঘাট এলাকার এক মৎস্য ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আড়তগুলোতে প্রকাশ্যে জাটকা বিক্রি হচ্ছে। অথচ সেখানে অভিযান চালানো হয় না। জাটকা জাল অবাধে বিক্রি হচ্ছে, সেখানে অভিযান নেই। এসব লোক দেখানো। মৎস্য ও নৌ পুলিশ এসব দেখেও যথাযথ ভূমিকা নিতে পারছেন না। প্রশাসন বড় একটি গোষ্ঠী বা সিন্ডিকেট এর সঙ্গে জড়িত থাকায় জাটকা নিধন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারছেনা। তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা ইলিশ ধরা, বিক্রি ও পরিবহন থামছেই না।
মৎস্যজীবীদের অনেকেই জানিয়েছেন, দশমিনা উপজেলার তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর উপকূলেই নয় এ চিত্র। ভোলা ও বরগুনা সহ উপকূলের সর্বত্রই। মৎস্যজীবিরা সরকারের নিষেধাজ্ঞার গুরু থেকেই জাটকা নিধনে একজোট হয়ে মাঠে নেমেছে। জাটকা নিধন বিষয় মৎস্যজীবিদের যুক্তি, তারা বয়া বন্ধ রাখলেও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের জেলেরা ধরে নিয়ে যাচ্ছে, যার কারণে দেশীয় ছেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে মৎস্যজীবীদের এমন দাবি কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, কর্মকর্তা ও প্রশাসনের লোকজন মাঝেমধ্যে সড়কে অভিযান চালিয়ে জাটকা ইলিশ আটক করার খবর শোনা গেলেও জাটকা ধরার জাল বিক্রি বন্ধে কোনাে অভিযান দেখা যায়নি। দোকানগুলোতে অবাধে জাটকা ধরার জাল বিক্রি করা হচ্ছে। পটুয়াখালীর দশমিনায় সরজমিনে দেখা গেছে, তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর উপকূলে মৎস্য আড়তগুলোতে জাটকা ইলিশের স্তূপ রয়েছে। দেখা মিলছে না বড় ইলিশের। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার বেশি জাটকা আড়ৎ ও হাটবাজারে বেচাকেনা হচ্ছে। অথচ সরকারি বিধান অনুযায়ী, ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ২৫ সেন্টিমিটারের উমিটারের কম দৈঘোর ইলিশ ধরা, পরিবহন ও বিপবন সম্পূর্ণ নিবিদ্ধ। মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ (সংশোধিত) অধ্যাদেশ-২০-২৫ অনুযায়ী এ অপরাধে দুই বছর কারাদন্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমান হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এসব আইনি কঠোরতা এলাকায় দেখা মেলেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আড়তকর্মী জানান, প্রশাসন মাঝেমাধ্যে অভিযান চালায়। কিন্তু জাটকা ক্রয়-বিক্রয় কখনোই পুরোপুরি বন্ধ থাকে না। জেলেদের দাবী, নদীতে বড় ইলিশের সংকটে। বিকল্প জীবিকা না থাকায় তারা হয়েই জাটকা শিকার করেন। তারা আরো বলেন, ইলিশ বড় হওয়ার আগেই ছোট ফাঁসের জাল নিয়ে ধরে ফেলা হচ্ছে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরতিজা হাসান জানান, আড়ত, ট্রলার ঘাট ও বাজার ঘুরে দেখে সংশ্লিষ্টদের কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছ্।ে তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি এভাবে জাটকা নিধন অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে বড় ইলিশের আকাল দেখা দিবে। তাই এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata